আমরা প্রতিদিন ধরে আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনের ইতিহাস রচনা করি। আজকের দিনে বসে যা করি তারই প্রতিফলন তো আমরা ভবিষ্যতে দেখতে পাই। তাই আজ যেন আমি সঠিক পথে চলি, সঠিক কাজ করি। তবেই তো আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা এক উজ্জ্বল পৃথিবী রেখে যেতে পারবো। আর তা যদি না পারি তো আমাদের জীবনটাই বৃথা গেলো। ভোগ করে, আনন্দ করে যা পেয়ে গেলাম, তাতে আমি খুশী হলাম বটে, কিন্তু আমার এত বৎসরের লালিত, পালিত এত প্রিয় মানবজন্ম পরমব্রহ্মের চোখে এক আগাছা স্বরূপ প্রতীয়মান হলো।
স্বাধীনতার সুখ ভোগ করে বহু বছর কেটে গেল। এবার ওঠো, জাগো, চারিদিকে তাকাও। কঠোর, সংগ্রামী মন নিয়ে যে যার কাজে লেগে পরো। আর কতদিন নিজের ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে কাটাবে? আজ তুমি নিজের ঘরের মধ্যে নিজের সকল সমাজ তথা অন্য সকল চেতনাকে আবদ্ধ করে রেখেছো। কাল তোমার সন্তান স্থান নেবে তোমার বা তার নিজের বাড়ির অন্ধকার চোরাকুঠুরিতে। এতটুকু আলো, একটুখানি বাতাসের জন্য হাহাকার করবে সে। তার জন্য এই দিনলিপি লিখে রেখে যেয়ো না। তার জন্য মুক্ত আকাশের নীচে প্রাণ ভরে নিশ্বাস নেওয়ার স্বাধীনতাটুকু নিশ্চিত করে রেখে যাও।
তাকে বৃহত্তর সমাজের অংশ করে গড়ে তোলো। নিজের প্রতিবেশীকে ভালবাসতে শেখাও। দরিদ্রের সেবা করতে শেখাও। তাকে বস্তুতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে মুক্ত করে, বর্তমান জগতের হাজার, হাজার অপ্রয়োজনীয় প্রলোভন থেকে মুক্ত করে তাকে শিখিয়ে যাও বাঁচার অর্থ কি। জাগিয়ে তুলো তার মধ্যে কিছুটা আধ্যাত্মচেতনা। তবেই সে নিজেকে জানতে, বুঝতে শিখবে, নিজেকে মেলে ধরতে শিখবে। তাকে শিখিয়ে যেয়ো যে নিজেও যেমন বাঁচবে, ভোগ করবে, আবার চারপাশের সবাইকেও বাঁচতে সাহায্য করবে, যতটা সম্ভব, সামান্য কিছু ত্যাগের বিনিময়ে। এতেই মানবজীবন, তথা মানব-সংসারের সার্থকতা। পরমব্রহ্মকে জানতে পারলে, তাঁকে স্মরণ করতে পারলে আর কোনও অসুবিধাই থাকে না, কোনও বাধাই বাধা থাকে না। এর মধ্য দিয়েই আমরা সবাই মনুষ্যত্বের জয়গান করতে পারি। এই পৃথিবীতে এইভাবেই একদিন স্বর্গরাজ্য স্থাপিত হবে।
ওঁ নমঃ শিবায়ঃ।
চন্দ্রভানু গুপ্ত, জুলাই ২০০৪
Tweet
No comments:
Post a Comment
অনুগ্রহ করে আপনার ব্ক্তব্য এইখানে অবশ্যই লিখুন......