"পাঠক,পাঠিকাদের মতামত বা মন্তব্যই তো লেখকদের লেখিকাদের পুনরায় লিখিবার একমাত্র প্রেরণা। তাই দয়া করিয়া মতামত দিতে ভুলিবেন না, তা সে যেমনই হউক না কেন ।" http://tobey-shono.blogspot.com

Monday, January 23, 2012

জোনাকি

ল্যাম্পপোস্টের আলোটা আজ কোনও কারণে জ্বলছে না। তারই নীচে জোনাকি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে। এর আগেও সে এই ল্যাম্পপোস্টটার নীচে অনেক বিকেলে অপেক্ষা করেছে। আজকের অপেক্ষাটা একটু অন্যরকমের। মনের আনন্দটা আজ বেশ কিছুটাই আলাদা। দিনের শেষ আলোটুকুও ফুরিয়ে এলো। ঝির ঝির করে বৃষ্টি পরছে। ছাতায়ে বৃষ্টির জলের থেকে মাথাটা আটকাচ্ছে বটে, তবে শাড়ির নীচের দিকটা ভিজেই চলেছে। দু একজন পথচারী সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছেও। একা সন্ধ্যাবেলা একটি মেয়েকে রাস্তায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে মানুষ একটু কৌতূহল তো দেখাবেই। এই জন্যই রাজর্ষিকে বারবার বলেছিল জোনাকি, "তুমি কিন্তু দেরি কোরো না।" রাজর্ষি কোনদিন তো এমন দেরি করে না। আর আজ এই বিশেষ দিনে তার কি হল? ভেবে পায় না জোনাকি। রাস্তার পাশেই একটা বাগানঘেরা বাড়ির দেয়ালের ধারে একটা গন্ধরাজ ফুলের গাছের ডাল ফুটপাথের ওপর এসে পরেছে। একবার ভেবেছিল একটা ফুল নিয়ে মাথায় লাগাবে। তারপরই তার মনে হল, না থাক, রাজর্ষি আসুক। ওকেই বলবে লাগিয়ে দিতে।

চলন্ত গাড়িগুলোর হেডলাইটএর আলো ক্ষণিকের জন্য তার সর্বাঙ্গ আলোকিত করে আবার তাকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অসহ্য এই গাড়ির আলোগুলো। ভাবে জোনাকি। আর কতক্ষণ এভাবে সে দাঁড়িয়ে থাকবে?

একজন রিকশাওয়ালা সামানে এসে জিজ্ঞাসা করলো, "দিদিমণি যাবেন?" তাকে না বলে দিল জোনাকি। ঘড়িতে সময় তখন সাতটা পেরিয়ে গেছে।

আরও কতক্ষণ সে দাঁড়িয়েছিল ল্যাম্পপোস্টের নীচে তা মনে নেই। আর সে ঘড়ি দেখেনি। রাস্তাটা ফাঁকা হয়ে আসছে। উল্টোদিকের দোকানগুলোও একটা দুটো করে বন্ধ হচ্ছে। এক একটা গাড়িও এখন আসছে অনেক দেরিতে।

কত কথা মনে পড়ে জোনাকির। রাজর্ষির সঙ্গে আলাপ দু বছর আগে। সালটা ছিল ঊনিশশো আটাত্তর। যেবার জোনাকি বিএ পার্ট ওয়ান পরীক্ষা দেয়। তার দু বছর আগে মাকে হারায় জোনাকি। হঠাৎ এই মুহূর্তে মার কথা তার খুব মনে পরছে। আর কিছু মনে পরে না জোনাকির। মাথাটা কেমন যেন অস্থির লাগছে। বাবাকে গিয়ে কি বলবে সে বুঝতে পারে না। আজ ছিল বাবার সঙ্গে রাজর্ষির প্রথম আলাপের দিন। এক পা দু পা করে কখন যে সে বাস স্টপে এসে দাঁড়ায় তা তার মনে নেই। তারপর বাস ধরে বাড়ি। বাড়ি ফিরে রাজর্ষিকে ফোন করবার চেষ্টা করে জোনাকি। কিন্তু তাকে বাড়িতে পায়নি। রাজর্ষির মায়ের কাছ থেকে জানতে পারে কোনও বিশেষ কাজে সে বেরিয়ে গেছে। ফিরতে রাত হবে। এর পর একটু রাতে জোনাকি আবার ফোন করে। কেউ ফোন ধরেনি। বাবা কোনও প্রশ্ন করে জোনাকিকে বিব্রত করেন নি। মেয়ে তার বড় আদরের।

দু দিন বাদে রাজর্ষির অফিস থেকে জোনাকি জানতে পারে রাজর্ষি বাঙ্গালোরে বদলি হয়ে গেছে। ওর মা তো আমায় কিছু বললেন না এই বিষয়ে সেদিন রাতে। ভাবে জোনাকি।

মাস ছয়েক বাদে সকল অপেক্ষার অবসান ঘটলো যেদিন জোনাকি হাতে পেল রঞ্জনার বিবাহের নিমন্ত্রণ পত্র

পাত্রের নাম রাজর্ষি মল্লিক। হঠাৎই জোনাকির মনে পড়ে রঞ্জনার বাবা বাঙ্গালোরে রাজর্ষির কোম্পানিতেই খুব বড় অফিসার না? তাই তো। একটা কথাই জোনাকির শুধু মনে হল। যাওয়ার সময় রাজর্ষি একবার তাকে বলে গেলো না?

গিয়েছিল জোনাকি রঞ্জনার বিয়েতে, শেষ বিদায়ের বেদনাটুকু সকল মন প্রাণ ভরে নিয়ে আসতে। হয়ত বা বাকি জীবনের পাথেয়টুকু অর্জন করে আনতে। মেয়েরা যে জীবনে একবারই ভালোবাসে।


- চন্দ্রভানু গুপ্ত, ফেব্রুয়ারী, ২০০৫

No comments:

Post a Comment

অনুগ্রহ করে আপনার ব্ক্তব্য এইখানে অবশ্যই লিখুন......

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...