"পাঠক,পাঠিকাদের মতামত বা মন্তব্যই তো লেখকদের লেখিকাদের পুনরায় লিখিবার একমাত্র প্রেরণা। তাই দয়া করিয়া মতামত দিতে ভুলিবেন না, তা সে যেমনই হউক না কেন ।" http://tobey-shono.blogspot.com

আমার কথা

আমার আঁকা গ্রামবাংলার ছবি - আমার বড় প্রিয়
 নিজের কথা যে কি লিখিবো তা ভাবিয়া পাই না। কোনোটাই লেখার মত মনে করিতে পারি না। আসলে নিজের সঙ্গে বাস করিতে, করিতে নিজের সব কিছু দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্মের মত বাঁধাধরা কতগুলি স্মৃতির মত হইয়া গিয়াছে। তা আর ঢাক, ঢোল পিটাইয়া বলিবার কি আছে? তবু বলিতে হয়, বলিতে হইবে। যেমন মৌখিক পরীক্ষায় উত্তর দিতে ইচ্ছা না করিলেও দিতে হয়। এই প্রসঙ্গে ইস্কুলের এক মৌখিক পরীক্ষার কথা মনে পড়িল। সংশ্লিষ্ট মাস্টারমশাইয়ের উপর বিরূপ মনোভাব থাকার ফলে সব ভুল উত্তর দিয়া, চুপ করিয়া থাকিয়া গোল্লা পাইয়াছিলাম। ভাবিয়াছিলাম মাস্টারমশাই খুব জব্দ হইলো। তবে আজ আর গোল্লা পাইতে ইচ্ছা হয় না। আজ স্বসম্মানে উত্তীর্ণ হইতে চাই।


জন্মিয়াছি ও বড় হইয়াছি ভারতবর্ষের কলিকাতা শহরে। এই শহরকে কলা ও সংস্কৃতির এক পীঠস্থান বলিয়া গণ্য করা হয়। তার প্রভাব আমার উপর কিছুমাত্র পরিবে না তা কি হয় নাকি? অতএব খুব বাল্যাবস্থা হইতেই ছবি আঁকার নেশা আমাকে পাইয়া বসে। ইস্কুলের কলা বিভাগের দুইজন মাস্টারমশাইয়ের কথা মনে পরিতেছে - শ্রীযুক্ত কমল মজুমদার ও সলীল ভট্টাচার্য। দুইজনকেই আমার সস্রদ্ধ প্রণাম জানাই। অনেক কিছুই শিখিয়াছিলাম তাঁহাদের কাছ হইতে।


তবে জীবিকা উপার্জনের জন্য একদা বাণিজ্য ও কম্পিউটার শাখায় বেশ কিছু পড়াশুনা করিতে হয়। কর্মজীবনে ঢুকিবার ফলে ছবি আঁকা হইতে বেশ অনেকটা দূরে ছিলাম প্রায় বাইশ বৎসর। কিন্তু হইবে কি? শিল্প আমায় ছাড়িল না, আমিও তাকে ছাড়িতে পারিলাম না। চল্লিশ পার হইবার পর চোখে চশমা লাগাইয়া আবার নূতন করিয়া কাগজ, পেন্সিল, রঙ ও তুলি লইয়া কাজ শুরু করিলাম। সে ছিল এক নূতন অভিজ্ঞতা। অনেকটা রাস্তা অতিক্রম করিতে হইবে। বহু কাজ বাকি পরিয়া আছে। আজও সেই পথেই চলিতেছি।


লেখার অভ্যাস কোনদিন ছিল না।  চল্লিশের পর ইহা কোথা হইতে যেন আসিয়া আমাকে চাপিয়া ধরিল। তারই মধ্যে কিছু আধ্যাত্মিকতা, কিছু দর্শন আর কিছু অর্থনীতির নিয়ম কানুন লইয়া দিনের অনেকখানি কাটে। মাঝে মাঝে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোনও প্রবন্ধের ইংরাজি অনুবাদ করি। ইহা বড়ই আনন্দের কাজ।


স্ত্রী, পুত্র ও মাতা সমেত আমি ঘোর সংসারী মানুষ। রান্না করিতে ও লোককে খাওয়াইতে বিশেষভাবে ভালবাসি।


মনে প্রশ্ন জাগিতে পারে কলা, অর্থনীতি, দর্শন, আধ্যাত্মিকতা - আমি কিসের তাগিদে এই সব লইয়া চর্চা করিতেছি? উত্তর একটাই। অজানাকে জানিবার তাগিদে। ইহাই শান্তি ও আনন্দ পাইবার শেষ কথা। মৃত্যু হইতে অমৃতে পৌঁছাইবার অন্যতম পথ। তাই শিখিবার চেষ্টা করিতেছি, প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে। সামান্য যা  শিখিতেছি, তাহার ননীটুকু সকলের কাছে তুলিয়া ধরাই তো আমার কাজ। তবেই তো সফল হইবে নিজেকে প্রকাশ করা। উপনিষদে এই কথা বারংবার বলা রহিয়াছে।  "আগে নিজেকে চেনো, জানো, তারপর নিজেকে প্রকাশ করো। ইহার মধ্যেই রহিয়াছে মনুষ্যজন্মের সার্থকতা।" তাই সর্বাপেক্ষা বড়ো ধর্ম হইল মনুষ্যত্বের ধর্ম। বিধাতার সৃষ্টির সকল সার্থকতা ইহারই মধ্যে রহিয়াছে।


এই সমগ্র পৃথিবী শিক্ষার এক সুবৃহৎ কক্ষ। আমরা সবাই তারই মধ্যে ছাত্র হইয়া বসিয়া আছি। আমি এমনভাবেই সমগ্র জীবন কাটাইবার ইচ্ছা পোষণ করি এবং নূতন কিছু যেন সৃষ্টি করিতে পারি। আমার সকল কর্ম যেন বিধাতার চরণে অর্ঘ্য হইয়া উঠিতে পারে। 

চন্দ্রভানু গুপ্ত - জানুয়ারি, ২০১২
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...