
এই সময়ে পৃথিবীর প্রায় অর্ধভাগ নিদ্রিত অবস্থায় নিশ্চুপ। রাতের নীরবতা কোনও এক প্রতিবেশীর ছাদ থেকে জমে থাকা জল পরার শব্দে প্রতি মুহূর্তে ভঙ্গ হচ্ছে। কিন্তু রাতকে যেমন নীরব মনে হয় সে কি সত্যিই তেমন নীরব? হয়ত নয়। নীরব রাত্রিকাল কোলাহলমুখর দিনের চেয়ে অনেক বেশি সচল এবং প্রাণবন্ত। রাতের নীরবতার মধ্যে যে প্রাকৃতিক সামঞ্জস্য আছে তা মানসচক্ষু দিয়ে উপলব্ধি করতে হয়। দিনের বেলায় এই সামঞ্জস্য খুব বড় একটা লক্ষ্য করা যায় না। যা কিছু বৃদ্ধি পায় তা কেবলই রাতের বেলায়। দিনের বেলায় এই পৃথিবী একান্তই আমাদের। তখন আমাদের প্রয়োজন মত এই পৃথিবীকে আমরা ব্যবহার করি। রাতে আমরা হয়ে যাই এই পৃথিবীর। কারণ রাত্রিকালেই আমরা নিজেদের সম্পূর্ণ আধ্যাত্মিক চেতনার মধ্যে ফিরে পাই, এবং আমাদের সমস্ত ইচ্ছাগুলি মনের উপরিভাগে উঠে আসে। রাতে আমরা একটু পিছনদিকে ফেরবার প্রবনতা পোষণ করি। দিনের বেলা আমরা যে জগতে বিচরণ করি তার অনেকটাই বস্তুতান্ত্রিক । মানবসভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে ব্যস্ত থাকি। রাতে আমরা স্বার্থহীন, পরোপকারী, দয়ালু হয়ে উঠি। দিনে এই চারিত্রিক বৈশিষ্টগুলি তেমন ভালভাবে লক্ষ্য করা যায় না।
রাতের আঁধার আমাদের আধ্যাত্মচেতনাকে উদ্বুদ্ধ করে তোলে। দিনের বেলায় আমরা যে ধাপে ধাপে নিজেদের হারাতে থাকি তা কেবল রাতের বেলায় নতুন এক আলোয় নিজেদের খুঁজে পাওয়ার জন্যই। তাই তো রাত আমাদের অনেকভাবে সমৃদ্ধ করে তোলে। রাতের নিজস্ব একটা একাকীত্ববোধ আছে। এই একাকীত্ববোধের জন্যই আমরা আবার নিজেদের মধ্যে নিজেদের আত্মাকে খুঁজে পাই। একমাত্র রাতে বেলাতেই আমরা দূর আকাশের তারা ও চাঁদের সঙ্গে একটা আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি। মন যতদূর খুশী তার পরিধি বিস্তার করতে পারে। চাঁদের স্বপ্নময়তা আমরা ভালোভাবে বুঝতে পারি যখন একটি পূর্ণচন্দ্র ও একফালি বাঁকা চন্দ্র তাদের সতন্ত্র, প্রছন্ন এবং আলাদা, আলাদা প্রভাব আমাদের মনের ওপর বিস্তার করে। পূর্ণচন্দ্র আমাদের মনকে প্রেমে ভরিয়ে তোলে। আর একফালি বাঁকা চন্দ্র আমাদের মনে আনে এক বিষাদের সুর। রাতের অন্ধকার আমাদের কাছে দিনের আলোকময়তার চেয়ে অনেক বেশী আপন করে ধরা দেয়। অন্ধকার আমাদের মানসচক্ষুর সামনে অনেক বেশী কিছু উপস্থাপন করে যা দিনের উজ্জ্বল আলো কখনই পারে না। তা আমাদের মনে এক প্রসন্ন, চিরস্থায়ী প্রভাব এনে দেয়। রাত বারংবার আমাদের জীবনের পথ চলার জন্য তৈরি করে দেয়। আমরা কোনও এক পরমাত্মার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে শান্তি পাই, যা আমাদের আবার সজীব করে তোলে। তাই বলি, যে রাতের অন্ধকার উপভোগ করে তাকে হৃদয়ে ধারণ করতে পারে না, সে ভোরের আলোও ঠিকভাবে দেখতে পায় না।
- চন্দ্রভানু গুপ্ত, অগাস্ট ৭, ২০১১ Tweet
No comments:
Post a Comment
অনুগ্রহ করে আপনার ব্ক্তব্য এইখানে অবশ্যই লিখুন......