"পাঠক,পাঠিকাদের মতামত বা মন্তব্যই তো লেখকদের লেখিকাদের পুনরায় লিখিবার একমাত্র প্রেরণা। তাই দয়া করিয়া মতামত দিতে ভুলিবেন না, তা সে যেমনই হউক না কেন ।" http://tobey-shono.blogspot.com

Thursday, January 26, 2012

স্মৃতি রয়ে যায়

প্রথম পরিচয়ের পর কম্পিউটার নামক যন্ত্রটার সঙ্গে অয়নের অনেক বছর কেটে গেছে সেই ঊনিশশো সাতাশি সাল থেকে ঊনিশশো নিরানব্বই প্রথম ইন্টারনেট ব্যবহার ওই নিরানব্বই সাল থেকেই অয়নের বয়েস তখন ঊনচল্লিশ পেরিয়ে চল্লিশের কোঠায়ে তখন বিশেষ ভালো সামাজিক যোগাযোগের ব্যবস্থা ইন্টারনেটে ছিল না ই-মেলএর মাধ্যমে কিছু যোগাযোগ করা যেত আর ছিল সরাসরি কিছু কথা বলার ব্যবস্থা, যেটাকে ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং বলে মাস-খানেক ব্যবহার করার পরই ইন্টারনেটে অয়নের চার, পাঁচজন বন্ধু জুটে গেল খুব মজা লাগতো অয়নের তাদের সঙ্গে চিঠি আদান প্রদান করতে এদের সবাইই ছিল বিদেশী কেউই ভারতীয় নয় বন্ধুর সংখ্যা আস্তে আস্তে দশ বারোতে গিয়ে ঠেকলো

আজকে, অর্থাৎ দু হাজার বারো সালে, তাদের দুজনের সঙ্গে অয়নের এখনও যোগাযোগ আছে কাজের ব্যাপারে যোগাযোগ দিয়ে শুরু করে একজনের সঙ্গে অয়নের বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল তার নাম কাথেরিন তার তখন প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়স ফায়ার সার্ভিস ডিপার্টমেন্টের কর্মী ছিল সে তা ছাড়াও এক নামকরা আন্তর্জাতিক সামাজিক সংস্থার তৎপর সদস্য ছিল তার আরও একটা পরিচয় ছিল এক নামকরা ইংরাজ লেখকের বংশধর ছিল কাথেরিন উচ্চ বংশের উচ্চ সভ্যতা ও সংস্কৃতির পরিচয় অয়ন পরে অনেকবার পেয়েছে

প্রথমে কয়েকবার কাথেরিনের সাথে ই-মেল আদান প্রদানের পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়

আবার যোগাযোগ বছর খানেক বাদে দুহাজার এক সালে ভারতের গুজরাটে এক ভয়াবহ ভূমিকম্প হয় বহু লোক মারা যায় খবরের কাগজে সেই খবর দেখে কাথেরিন অয়নকে চিঠি লেখে জানবার জন্য যে সে ঠিক আছে কিনা এবং ভূমিকম্পের জায়গা থেকে অয়নের বাসস্থান কত দূরে বলে রাখি, অয়ন ছিল দিল্লীর বাসিন্দা এমন একটা চিঠি পেয়ে অয়ন খুব অবাক হয়েছিল, আবার ভালও লেগেছিল যে এতদিন বাদে এমনই এক কারণে কেউ তার খোঁজ করছে যাকে সে ভুলেই গিয়েছিল যাই হোক, এর পর থেকে অয়ন ও কাথেরিনের প্রায়ই চিঠি বিনিময় হতো অয়ন কাথেরিনের দেশের অনেক নতুন তথ্য জানতে পারে তার চিঠি থেকে যেমন বরফে ঢাকা কাথেরিনের দেশে তাদের বাড়িগুলো মাটি থেকে বেশ কিছুটা উঁচু করে বানানো হয় কাঠের পাটাতনের উপর তাতে নীচের ঠাণ্ডাটা আটকানো যায় রাত্রে ওই পাটাতনের নীচে হরিণজাতীয় এক প্রাণী এসে শুয়ে থাকে এমনই আরও কত তথ্য কাথেরিনের দেশের খুব সুন্দর, সুন্দর ছবিও সে পাঠাতো অয়নের এসব জানতে ও দেখতে বেশ ভালই লাগতো অয়নের স্ত্রী মধুমিতা ও পুত্র অনির্বাণও সে সব ছবি দেখে বেশ আনন্দ পেতো এই সূত্রে কাথেরিনের স্বামী টমাসের সঙ্গেও বন্ধুত্ব হয়ে যায় অয়নের

একবার পড়ে গিয়ে কাথেরিনের হাতের হার ভেঙ্গে গিয়েছিল বেশ কিছুদিন কম্পিউটার ব্যবহার করতে খুব অসুবিধা হয়েছিল হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা একটা ছবিও পাঠিয়েছিল অয়নকে


দুহাজার এক সালের ডিসেম্বর মাস কাথেরিন লিখলো অয়নকে, তারা, অর্থাৎ সে ও তার স্বামী টমাস, কিছুদিনের জন্য পাশেরই এক ছোট্ট দেশে সাতদিনের জন্য বেড়াতে যাবে অনেকদিন কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয়নি খুবই আনন্দিত লাগলো কাথেরিনকে তার চিঠিতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য সে কেনাকাটা করছিল খুবই আনন্দের সঙ্গে আরও লিখলো যে ফিরে এসে সে ভারতে যাবে কিছুদিনের জন্য, ওই সামাজিক সংস্থার কিছু কাজে জানতে চাইলো ভারতে বাঙ্গালোর শহর থেকে দিল্লী কতদূর

তারিখটা ডিসেম্বর কুড়ি, দু হাজার এক অয়ন কাথেরিনের একটা ই-মেল পেলো তাতে কাথেরিন লিখেছে সে খুব আনন্দের সঙ্গে বেড়াচ্ছে কয়েক দিনের বাদে সে আবার যোগাযোগ করবে তবে কম্পিউটারে স্প্যানিশ কিবোর্ড হওয়ায় টাইপ করতে বেশ একটু অসুবিধা হচ্ছে

অয়ন তারপর কিছুদিন আর কাথেরিনের কোনও চিঠি পায়নি খ্রিস্টমাস ও নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে অয়ন একটা ই-মেল পাঠিয়েছিল কোনও উত্তর পায়নি অয়ন ভেবেছিল কাথেরিন নিশ্চয় বেড়াতে ব্যস্ত

তারিখটা জানুয়ারি ছয়, দু হাজার দুই অয়ন সেদিন রাতে ই-মেল পেলো একটা না, কাথেরিনের লেখা নয় তার স্বামী টমাসের লেখা কাথেরিনের মৃত্যুসংবাদ ছিল সেটা স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে জলের চাপ সহ্য করতে না পারায়ে তার মৃত্যু হয়, ডিসেম্বরের ছাব্বিশ তারিখে বাঙ্গালোরে তার আর আসা হলো না

শোক জ্ঞাপন করে অনেক কষ্ট করে অয়ন একটা উত্তর দিয়েছিল টমাসকে বলেছিল সম্ভব হলে যোগাযোগ রাখতে তবে টমাস তা বেশিদিন পারেনি

আজও কখনও, কখনও কাথেরিনের কথা অয়নের মনে হয় মাত্র দেড় বছরের বন্ধুত্ব তখন চোখ দুটো তার জলে ভরে ওঠে বন্ধু হিসাবে এবং তারও ওপরে মানুষ হিসাবে কাথেরিন যেন প্রয়োজনের থেকে একটু বেশীই উদার ছিল তাই হয়ত তাকে হারাতে হয়েছিল অয়নের


- সত্য ঘটনা অবলম্বনে

No comments:

Post a Comment

অনুগ্রহ করে আপনার ব্ক্তব্য এইখানে অবশ্যই লিখুন......

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...