"পাঠক,পাঠিকাদের মতামত বা মন্তব্যই তো লেখকদের লেখিকাদের পুনরায় লিখিবার একমাত্র প্রেরণা। তাই দয়া করিয়া মতামত দিতে ভুলিবেন না, তা সে যেমনই হউক না কেন ।" http://tobey-shono.blogspot.com

Friday, June 7, 2013

নোলক

কোথা হইতে কি যে হইলো অভয় বুঝিতে পারিল না। হতবুদ্ধি হইয়া খানিকক্ষণ কদম গাছের তলায় দাঁড়াইয়া রহিল। এমন কি বলিল সে যে ফুলটুসি একেবারে গোত্তা মারিয়া উল্টা দিকে হাঁটিতে শুরু করিল। হঠাৎ কি মনে হইতেই সে চেঁচাইয়া বলিয়া উঠিল, "অরে অ ফুলটুসি, যাস নে, শোন। নাকের নোলক কিনে দেব অখন।" শুনিয়া ফুলটুসি ফিরিয়া তাকাইল। অভয় স্বস্তিতে নিশ্বাস ফেলিল।

বলিয়া রাখি অভয় এবং ফুলটুসি দুইজনেই ময়নাতলা গ্রামে থাকে। বয়সে দুইজনেই কচি, এই আঠারো-কুড়ি হইবে। সদ্য একে অপরকে ভালবাসিয়া ফেলিয়াছে। প্রেম আবার যা তা প্রেম নয়। অভয় ফুলটুসির খোপায় চাঁপাফুল গুজিয়া দেয়, ফুলটুসি কদম গাছের তলায় বসিয়া অভয়ের চুলে বিলি কাটিয়া দেয়, অভয় ফুলটুসির জন্য ছোলা-ভাজা আনে তো ফুলটুসি অভয়ের জন্য গৃহ হইতে লুকাইয়া মুড়কি লইয়া আসে। তারা ঠিক করিয়াছে বিবাহ তাহারা করিবেই। যদি দুই জনের মা বাবা রাজি না হয় তো পালাইয়া গিয়া তাহারা বিবাহ করিবে।

এ হেন ফুলটুসি বায়না ধরিয়াছে তাহাকে নাকের নোলক কিনিয়া দিতে হইবে। অভয়ের পয়সা নাই। তাই সে একটু কিন্তু, কিন্তু করিতেই ফুলটুসির যত রাগ।

অভয়র বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। অভয় তার একখানি জামা বেচিয়া দিয়া সেই পয়সায় গ্রামের মেলা হইতে একখানি নোলক অবশেষে কিনিল। নোলক পাইয়া ফুলটুসির সে কি আনন্দ। খানিক নাচিল, খানিক হাসিল তাহার পর অভয়কে জড়াইয়া ধরিয়া খানিক কাঁদিয়াও লইল। তাহার পর সে নোলকটি পরিয়াই ফেলিল। কিন্তু নোলকটি পড়িয়া গৃহে যাইতে পারিল না। মা জানিলে একখানা হাড়ও আস্ত থাকিবে না। গৃহে যাওয়ার পূর্বে নোলকটি খুলিয়া অভয়কে দিয়া গেলো। কহিল বিবাহের দিন অভয় যেন তাহাকে নোলকটি পরাইয়া দেয়।

এমনি করিয়া মাস দুই আরও চলিল। তাহাদের প্রেম আরও নিবিড় হইলো।

একদিন হঠাৎই ফুলটুসি আসিল না বৈকালবেলা কদমতলায়। অভয় মনখারাপ করিয়া গৃহে ফিরিল। পরদিন সকালে ফুলটুসির ভাইয়ের নিকট হইতে জানিতে পারিল ফুলটুসিকে লইয়া তাহার মা ফুলটুসির মামাবাড়িতে গমন করিয়াছে।

প্রথমটা অভয় ভাবিল দুই চারি দিনের মধ্যেই ফুলটুসি ফিরিয়া আসিবে। কিন্তু ফুলটুসি ও তাহার মা ফিরিল না। ইহার পর হইতে অভয় বৈকালে একাই গিয়া কদম গাছের নীচে বসিয়া থাকে। অনেকক্ষণ বসিয়া থাকিয়া সন্ধ্যা হইলে মুখ কালো করিয়া একসময় গৃহে ফেরে। নোলকটি সর্বদা তার জামার পকেটেই থাকে।

ইহার মাস-খানেক বাদে অভয় একদিন দেখিল ফুলটুসিদের বাড়িতে খুব খানিকটা জাঁকজমক। পাড়া-পড়শির নিকট হইতে জানিল ফুলটুসির বিবাহ। শুনিয়া অভয় ছুটিয়া কদম গাছের তলার গিয়া বসিয়া পরিল। গৃহে ফিরিল সে অনেক রাতে।

ফুলটুসি চলিয়া গেলো বঁধু সাজিয়া কোনও এক অচিন গ্রামে। অভয়ের কাছে পড়িয়া রহিল তার নোলকটি।

ইহার পর অনেক বৎসর কাটিয়া গিয়াছে। অভয় বিবাহ করিয়া সংসারী হইয়াছে। অভয়ের বয়স এখন চল্লিশের কোঠায়। সেই কদম গাছটিও বৃদ্ধ হইয়াছ। নিজ গ্রামেই বসবাস করিতেছে অভয় স্ত্রী পুত্র কন্যা লইয়া। নোলকটি তার কাছে এখনও রহিয়াছে। আর তো কেহ তাহার কাছে অমন করিয়া নোলক পড়িতে চাহে নাই। মাঝে, মাঝে কদমতলায় গিয়া পকেট হইতে নোলকটি বাহির করিয়া দেখে। বিবর্ণ, তামাতে হইয়া গিয়াছে সেইটি।

No comments:

Post a Comment

অনুগ্রহ করে আপনার ব্ক্তব্য এইখানে অবশ্যই লিখুন......

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...