"পাঠক,পাঠিকাদের মতামত বা মন্তব্যই তো লেখকদের লেখিকাদের পুনরায় লিখিবার একমাত্র প্রেরণা। তাই দয়া করিয়া মতামত দিতে ভুলিবেন না, তা সে যেমনই হউক না কেন ।" http://tobey-shono.blogspot.com

Sunday, March 4, 2012

পাতিলেবু, ছানা, ইত্যাদি

কি বিপদ! কি বিপদ!! কি বিপদ!!! দুগ্ধ হইতে প্রস্তুত ছানা দিয়া কি প্রকার এক খাদ্য প্রস্তুত করিবেন আমার গৃহিণী। তাহাতে দোষ নাই। তবে ভালো না লাগিলেও হাস্যমুখে কহিতে হইবে বেশ খাইতে হইয়াছে, উত্তম হইয়াছে। আবার খাইতে ইচ্ছা হয়। খুব শীঘ্রই আবার ইহা প্রস্তুত করিও। তবে সে তো অনেক পরের ব্যাপার। দুগ্ধ হইতে ছানা প্রস্তুত করিতে পাতিলেবুর রস লাগে। আমার পুত্র ঠিকমতো চিনিয়া, বাছিয়া বাজার হইতে দুইটি পাতিলেবু লইয়া আসিয়াছে। দুঃখ এই, দুইটি পাতিলেবুই হরিৎ বর্ণের, অর্থাৎ কিনা কাঁচা, এবং কঠিন অর্থাৎ শক্ত। এইবার তলব পরিলো আমার। "লেবু হইতে রস বাহির করিয়া দুগ্ধে নিক্ষেপ করিয়া যাও, ইহারা বড় কঠিন", রান্নাঘর হইতে গৃহিণীর কণ্ঠস্বর কানে আসিয়া পৌঁছাইলো। অতএব কাজ ছাড়িয়া উঠিলাম।

গরম দুগ্ধের উপর আধখানা লেবু হাতে লইয়া কচলাইতে শুরু করিলাম। মুহূর্তের মধ্যেই বুঝিলাম কেন আমার তলব পরিয়াছে। আমি কহিলাম, "আমি কি হাতি যে পদতলে সকল কিছুকে দলিয়া পিষ্ট করিতে পারিব?" গৃহিণী ঈষৎ হাসিল। এক এক করিয়া দুইটি লেবুর চারিটি ফালি হইতে প্রাণপণ শক্তিতে রস নির্গত করিয়া দুগ্ধে নিক্ষেপ করিলাম। কচলানোর সময় ভীষণ সাবধানতা অবলম্বন করিতে হইল। হাত ফসকাইয়া লেবুর খণ্ডটি দুগ্ধে পড়িয়া গেলে লেবুর বাকি খণ্ডগুলি দিয়া আমার ছানা প্রস্তুত হইত। যাহা হউক, কোনও বিড়ম্বনা ঘটিল না। ছানা প্রস্তুত হইল। আমি রান্নাঘর হইতে প্রস্থান করিলাম। এইবারের মত রক্ষা পাইলাম বটে, তবে প্রায়শই আমার ওই লেবুর খণ্ডগুলির মত দশা হয়। গৃহিণীর দ্বারা নিংড়ানো, কচলানোর হাত হইতে কে কবে বাঁচিয়াছে?

ছানা দিয়া প্রস্তুত খাদ্যটি কেমন হইয়াছিল তাহা না খাইয়া বলিতে পারিলাম না। তবে অতীতের অভিজ্ঞতা বিশেষ আশার সঞ্চার করে না।

ওই যে টিকটিকি নামক প্রাণীটি, উহাকে আমি ডাকিয়া আমার বাসগৃহে আনি নাই। কিন্তু হইবে কি? রান্নাঘরে টিকটিকি দেখিলেই হইল। আমার দশা হইয়া পড়ে টিকটিকির চাইতেও করুণ। "ভেবেছ কি? বলি ভেবেছ কি? আমার রান্নাঘরে টিকটিকি, আর তুমি নাকে তেল দিয়ে ঘুমবে?" এমন বাক্য প্রায়ই শুনি। টিকটিকি কি আমার পোষা? আর টিকটিকি পুষিয়া যদি সন্তুষ্ট থাকিতে পারিতাম, তবে কি আর আমার এই দশা হইত? টিকটিকি বা আরশোলা তাড়াইবার যন্ত্রটা খুব সম্ভব আমারই নাকি আবিষ্কার করা উচিত ছিল। না পারাটাই আমার ঘোর অক্ষমতা। আহা! বাদ পড়িয়া গেছে। ওই যে আটটি পা বিশিষ্ট প্রাণীটি, মাকড়শা যার চলতি নাম, যদি দেখা যায় কোথাও, তবে আর কথা নাই। একবার চিৎকার করিয়াই সব স্তব্ধ। শয়নকক্ষে বাঘ দেখিলে ঠিক যেমনটি হয়। পিটাইয়া মাকড়শা মারিবার জন্য একটি ঝ্যাঁটা রাখা আছে কিন্তু মাকড়শা প্রাণীটি বাস্তবিকই চতুর। মাকড়শার চতুরতার সঙ্গে আমি ঠিক জড়াইয়া পরি।

বাজার হইতে ফরমাসের কোনও জিনিস আনিতে ভুলিয়া গেলে চলিবে না। অধিকাংশ সময়ই পুনরায় বাজার যাওয়া ছাড়া অন্য কোনও গতি থাকে না। কে যেন একসময়ে বলিয়াছিল, সব কিছুর জন্য তো আর ঈশ্বর বা সরকারকে দায়ী করা যায় না। তাই গৃহস্বামীকেই অধিকাংশ অঘটনের জন্য আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। আস্তে আস্তে গোটা জীবনটাই কাঠগড়ার চেহারা লইয়া তিন দিক হইতে ঘিরিয়া ফেলিতে থাকে। কাঠগড়ার একটি দিক অবশ্যই খোলা। তবে খোলা দিকটিতে কড়া পাহারা সর্বদাই মোতায়েন থাকে। গৃহস্বামীটির জেল হয় না কখনও। কিছুটা আনন্দ-নিরানন্দের সহিত সে চিরকাল গৃহপালিত অবস্থায় কাঠগড়াতেই দণ্ডায়মান থাকে।

No comments:

Post a Comment

অনুগ্রহ করে আপনার ব্ক্তব্য এইখানে অবশ্যই লিখুন......

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...