"পাঠক,পাঠিকাদের মতামত বা মন্তব্যই তো লেখকদের লেখিকাদের পুনরায় লিখিবার একমাত্র প্রেরণা। তাই দয়া করিয়া মতামত দিতে ভুলিবেন না, তা সে যেমনই হউক না কেন ।" http://tobey-shono.blogspot.com

Friday, February 10, 2012

ছাগলের পাকস্থলী

বটুকবাবু আমার বাড়ির বিপরীতেই থাকেন। ভদ্র, সচ্চরিত্র, মাঝবয়সী, সংসারী মানুষ। জীবজন্তু লইয়া অনেক পড়াশুনা করিয়া এক্ষণে এক জীবজন্তুর হাঁসপাতালে হিসাবরক্ষকের কাজ করেন। কিসের হিসাব রাখেন আমি অবশ্য জানি না।

এ হেন বটুকবাবু একদিন হাঁসপাতাল হইতে যখন ফিরিলেন তখন তার কোলে দেখা গেলো একটি ছাগল। সকলে ভাবিল পাঠা, কাটিয়া খাইবেন। পরে জানা গেলো ওটি একটি মেয়ে পাঠা, অর্থাৎ কিনা ছাগল। তা হউক না ছাগল, দোষের কি। ছাগল গৃহপালিত পশু, দুধ দেয়, ম্যা, ম্যা করিয়া ডাকে এবং কামড়ায় না। দুই দিন বাদে জানা গেলো ছাগলটি বটুকবাবু পুষিবার জন্য আনিয়াছেন। তা গ্রামে, গঞ্জে তো লোকে ছাগল পুষিয়াই থাকে। তবে কিনা কলিকাতার মত শহরের এক সম্ভ্রান্ত পল্লীতে গৃহে ছাগল? এ পর্যন্তও মানিয়া লওয়া গেলো।

প্রতিদিন সকালে দেখি বটুকবাবু ছাগলটির সামনের দুই পা উপরে তুলিয়া ধরিয়া তাকে পিছনের দুই পায়ে হাঁটানোর চেষ্টা করিতেছেন। একদিন আমাকে রাস্তায় ধরিয়া ছাগলের পাকস্থলীর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা শুনাইলেন বটুকবাবু। পাকস্থলীর ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে নাকি দুই পায়ে হাঁটিবার বিশেষ সম্বন্ধ রহিয়াছে। শুনিলাম, বুঝিলাম না কিছুই। হয়ত ভালো করিয়া শুনি নাই। ছাগলের পাকস্থলীর খবরে আমার কি কাজ তাহাও বুঝিলাম না।

যাহা হউক, একদিন এক কাণ্ড ঘটিলো। বটুকবাবুর স্ত্রী একটি উঁচু জায়গায় ডালের বড়ি রোদ্দুরে রাখিয়াছিলেন, শুকাইবার জন্য। ছাগলটি কাছেই বাঁধা ছিল। কিছুক্ষণ বাদে আসিয়া দেখেন ছাগলটি সামনের দুইটি পা উঁচু জায়গাটিতে তুলিয়া আপন মনে সেই কাঁচা ডালের বড়ি চিবাইতেছে। পাশেই ঝুলিতেছিল বটুকবাবুর স্ত্রীর একখানি শাড়ি, শুকাইতে দেওয়া। ছাগলটি তারও কিয়দংশ খাইয়া ফেলিয়াছে। দেখিয়া বটুকবাবুর স্ত্রী তো রাগিয়া আগুন।

তিনি বলিলেন, "এ কি করেছিস?"
ছাগলটি দাঁড়ানো অবস্থাতেই ডাকিয়া উঠিল, "ম্যা।"
বটুকবাবুর স্ত্রী বলিলেন, "কে তো মা? দাঁড়া, আজ তোর বাবা আসুক। এ বাড়িতে হয় তুই থাকবি, নয় আমি থাকব।"
ছাগলটি আবার ডাকিল, "ম্যা।"
বটুকবাবুর স্ত্রী মুখ ঘুরাইয়া ঘরে ঢুকিয়া গেলেন। এই বিস্তারিত বিবরণ আমি আমার স্ত্রীর নিকট হইতে শুনি। বিবরণে কিছু বাদ পরিয়াছিল কিনা কহিতে পারি না। তবে যা শুনিলাম, তাহাই যথেষ্ট। বটুকবাবু গৃহে ফিরিবার পর যা ঘটিলো তাহা সহজেই অনুমেয়। ছাগলটিকে আর পরদিন হইতে দেখিতে পাই নাই।

তবে বটুকবাবু, তার স্ত্রী ও ছাগলটি, এই তিনজনের মধ্যে বুদ্ধির প্রতিযোগিতায় ফলটি যা দাঁড়াইল, মানুষ হইয়া তাহা আমি কোনোমতেই মানিয়া লইতে পারিলাম না।

No comments:

Post a Comment

অনুগ্রহ করে আপনার ব্ক্তব্য এইখানে অবশ্যই লিখুন......

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...