"পাঠক,পাঠিকাদের মতামত বা মন্তব্যই তো লেখকদের লেখিকাদের পুনরায় লিখিবার একমাত্র প্রেরণা। তাই দয়া করিয়া মতামত দিতে ভুলিবেন না, তা সে যেমনই হউক না কেন ।" http://tobey-shono.blogspot.com

Wednesday, February 22, 2012

অপ্রাসঙ্গিক কথা

মোটেই বাজে বকবক করিতে বসি নাই। আমার বিস্তর কাজ আছে। ছবি আঁকি, গল্প, কবিতা লিখি, আবার কখনও, কখনও অর্থনীতির ও আধ্যাত্মিকতার চর্চা করিয়া থাকি। ছবি আঁকা মোটেই সহজ ব্যাপার নয়। রঙ, তুলি, কাগজ, পেন্সিল, তেল, জল, কত কি লাগে। তবে দেখিবেন, আমি যে এ কথা বলিলাম তা আবার ওই ওপরওয়ালাকে জানাইবেন না। আসলে আমাকে সকল রকম কাজ করিতে সেই তো সাহায্য করে। সে শুনিলে রাগ করিতে পারে। না হইলে আমি তো একটা পয়লা নম্বরের অকেজো মানুষ। তাই মান, মর্যাদা বিশেষ পাই না। দিনের বেশির ভাগ সময়েই আকাশ দেখি, তারা গুনি, গাছের পাতা গুনি, পাখি দেখি, গান শুনি, ইত্যাদি, ইত্যাদি, ইত্যাদি। আপনি আবার এইসব অকেজো মানুষদের গুণগুলি রপ্ত করিবেন না যেন। তবেই সর্বনাশ!

তবে এই জীবন নামক বস্তুটাকে একেবারে উপেক্ষা করতে পারি না। জীবন, জীবিকা, প্রাণ, আত্মা, কর্ম, মায়া, এগুলির সবকয়টিয়ই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ শব্দ। আলোচনার মাঝে এগুলির কথা সবাই বারবার বলে। জন্মের পর হইতে বহু বৎসর কাটিয়া গিয়াছে। কিন্তু আজও জীবন নামক বস্তুটি যে কি তাহা বুঝিলাম না। বনে, জঙ্গলে, পাহাড় পর্বতের আশেপাশে অনেক খুঁজিয়াছি, বুঝিলেন। পাই নাই। তাকে সামনে পাইলে জিজ্ঞাসা করিতাম, আচ্ছা মশাই, আমার রক্তমাংস-অস্থিপূর্ণ শরীরে আত্মা নামক কি একটা গুঁজিয়া দিয়া, আমার মধ্যে পরস্পরবিরোধী কতগুলি ইচ্ছার সঞ্চার করিয়া এবং হাত, পা ছুঁড়িতে শিখাইয়া সেই যে অদৃশ্য হইলেন, আর তো আপনার দেখা পাইলাম না। পড়ে অবশ্য হাঁটিতে শিখিয়াছি, এবং তার সঙ্গে আরও কত কি শিখিয়াছি। কিন্তু উদর ভরিবার একটা পাকাপাকি ব্যবস্থা করিলে হইত না? ওই ব্যবস্থাটি বরাবরই বড় কাঁচা রহিয়া গেলো। অতীতে না জানিয়া, বিষাক্ত ফল খাইয়া কত লোকের মৃত্যু হইল। এক্ষণে অবশ্য আর এমনটা ঘটে না। আসল কথা জীবন আমাদিগের একান্ত আপনার, খুবই কাছের। তাহাকে আমরা বৃথাই দূর, দূরান্তে খুঁজিয়া মরি। তাহাকে চিনিবার, জানিবার ব্যবস্থা আমাদের অন্তরেই রহিয়াছে। ওই যে আত্মা নামক বস্তুটি, যার মৃত্যু নাই, বিনাশ নাই, যাহাকে আমরা কখনও, কখনও প্রাণও বলিয়া থাকি, সেই সব বলিয়া দেয়, সকল কিছুর খোঁজ দেয়। আত্মার ডাকে সারা দিবার অভ্যাস একবার রপ্ত করিতে পারিলে জীবনকে সঠিক পথে চালাইবার নিয়মগুলি সবই জানা হইয়া যায়।

আত্মার ডাকে সাড়া দিতে বাধ সাধে আমাদের 'আমি'-টি। আমি ও আমার, এই করিয়াই আমরা সারা জীবন কাটাইয়া দেই, আত্মার দিকে একবার ফিরিয়াও তাকাই না। সে বেচারা অন্ধকারে বসিয়া গুমরাইয়া কাঁদে। 'আমি' বস্তুটির প্রয়োজন হইল সে আহরণ করে। আহরিত বস্তুগুলির উপর মালিকানার সীলমোহর লাগায়। তবে বস্তুর উপর তার অধিকার জন্মায়। আহরিত বস্তু জ্ঞানও হইতে পারে। ওই আহরিত বস্তুগুলির কিছু দিয়া জীবিকার কাজ বেশ চলিয়া যায়। এবার প্রশ্ন হইল, অধিকার কেন? কোনও কিছুর উপর অধিকার না থাকিলে তো তা দান করা যায় না। আবার দান কেন? এই তো বেশ আহরণ, মালিকানা ইত্যাদি লইয়া সুখের কথা হইতেছিল। দানের প্রয়োজন ওই আত্মার ক্রন্দন বন্ধ করিবার জন্য। সে যে একমাত্র দানেই তুষ্ট, দানেই শুদ্ধ। অতএব আহরণ ও দান, এই দুইয়েরই প্রয়োজন আছে। কর্মের মাধ্যমে হয় আহরণ, উৎসবের দিনে হয় দান। এরই মধ্য দিয়া জীবনের সন্ধান পাওয়া যায়।

এবার বলি, অতীতে যে কয়জন মানুষকে এই কথা কহিয়াছি, তাহারা এক্ষণে আমাকে এড়াইয়া চলে, আমার সামনে বেশীক্ষণ বসে না। আপনারাও কি ভবিষ্যতে উহাদের মত আমার নিকট হইতে পলায়ন করিবেন?

Friday, February 10, 2012

ছাগলের পাকস্থলী

বটুকবাবু আমার বাড়ির বিপরীতেই থাকেন। ভদ্র, সচ্চরিত্র, মাঝবয়সী, সংসারী মানুষ। জীবজন্তু লইয়া অনেক পড়াশুনা করিয়া এক্ষণে এক জীবজন্তুর হাঁসপাতালে হিসাবরক্ষকের কাজ করেন। কিসের হিসাব রাখেন আমি অবশ্য জানি না।

এ হেন বটুকবাবু একদিন হাঁসপাতাল হইতে যখন ফিরিলেন তখন তার কোলে দেখা গেলো একটি ছাগল। সকলে ভাবিল পাঠা, কাটিয়া খাইবেন। পরে জানা গেলো ওটি একটি মেয়ে পাঠা, অর্থাৎ কিনা ছাগল। তা হউক না ছাগল, দোষের কি। ছাগল গৃহপালিত পশু, দুধ দেয়, ম্যা, ম্যা করিয়া ডাকে এবং কামড়ায় না। দুই দিন বাদে জানা গেলো ছাগলটি বটুকবাবু পুষিবার জন্য আনিয়াছেন। তা গ্রামে, গঞ্জে তো লোকে ছাগল পুষিয়াই থাকে। তবে কিনা কলিকাতার মত শহরের এক সম্ভ্রান্ত পল্লীতে গৃহে ছাগল? এ পর্যন্তও মানিয়া লওয়া গেলো।

প্রতিদিন সকালে দেখি বটুকবাবু ছাগলটির সামনের দুই পা উপরে তুলিয়া ধরিয়া তাকে পিছনের দুই পায়ে হাঁটানোর চেষ্টা করিতেছেন। একদিন আমাকে রাস্তায় ধরিয়া ছাগলের পাকস্থলীর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা শুনাইলেন বটুকবাবু। পাকস্থলীর ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে নাকি দুই পায়ে হাঁটিবার বিশেষ সম্বন্ধ রহিয়াছে। শুনিলাম, বুঝিলাম না কিছুই। হয়ত ভালো করিয়া শুনি নাই। ছাগলের পাকস্থলীর খবরে আমার কি কাজ তাহাও বুঝিলাম না।

যাহা হউক, একদিন এক কাণ্ড ঘটিলো। বটুকবাবুর স্ত্রী একটি উঁচু জায়গায় ডালের বড়ি রোদ্দুরে রাখিয়াছিলেন, শুকাইবার জন্য। ছাগলটি কাছেই বাঁধা ছিল। কিছুক্ষণ বাদে আসিয়া দেখেন ছাগলটি সামনের দুইটি পা উঁচু জায়গাটিতে তুলিয়া আপন মনে সেই কাঁচা ডালের বড়ি চিবাইতেছে। পাশেই ঝুলিতেছিল বটুকবাবুর স্ত্রীর একখানি শাড়ি, শুকাইতে দেওয়া। ছাগলটি তারও কিয়দংশ খাইয়া ফেলিয়াছে। দেখিয়া বটুকবাবুর স্ত্রী তো রাগিয়া আগুন।

তিনি বলিলেন, "এ কি করেছিস?"
ছাগলটি দাঁড়ানো অবস্থাতেই ডাকিয়া উঠিল, "ম্যা।"
বটুকবাবুর স্ত্রী বলিলেন, "কে তো মা? দাঁড়া, আজ তোর বাবা আসুক। এ বাড়িতে হয় তুই থাকবি, নয় আমি থাকব।"
ছাগলটি আবার ডাকিল, "ম্যা।"
বটুকবাবুর স্ত্রী মুখ ঘুরাইয়া ঘরে ঢুকিয়া গেলেন। এই বিস্তারিত বিবরণ আমি আমার স্ত্রীর নিকট হইতে শুনি। বিবরণে কিছু বাদ পরিয়াছিল কিনা কহিতে পারি না। তবে যা শুনিলাম, তাহাই যথেষ্ট। বটুকবাবু গৃহে ফিরিবার পর যা ঘটিলো তাহা সহজেই অনুমেয়। ছাগলটিকে আর পরদিন হইতে দেখিতে পাই নাই।

তবে বটুকবাবু, তার স্ত্রী ও ছাগলটি, এই তিনজনের মধ্যে বুদ্ধির প্রতিযোগিতায় ফলটি যা দাঁড়াইল, মানুষ হইয়া তাহা আমি কোনোমতেই মানিয়া লইতে পারিলাম না।

Thursday, February 9, 2012

পরাণের মানুষ

পাইলাম না তো এহনো রে
সঙ্গে চলার সাথী,
হেইয়ার লইগ্যা আইজও আমি
প্রেমের মালা গাঁথি।
মনের মানুষ কয় যে কারে
বোঝে না তো দুনিয়া,
পলাইয়া যায় হগল মানুষ
কথাডা না শুনিয়া।
মনের লগে মন মিলাইলে
বাইথে হয় না বৈঠা,
এ্যমনে চলে জীবন-নৌকা
না খাটাইয়া পালডা।
চলিয়া যে যায় ব্যবাক মানুষ
কাম ফুরাইয়া গ্যলে,
শুকনা মালার লইয়া আমার
ক্যমনে গো দিন চলে।
পরাণের মানুষ কথায় তুমি
কথায় তুমি সাথী,
আশা লইয়া আইজও আমি
প্রেমের মালা গাঁথি।।


- কবিতাটি সুদ্ধ বরিশালের ভাষায় রচিত - ২০১২

Monday, February 6, 2012

একটি ভুতের জবানবন্দী

কি আর বলব আপনাকে? ভুত সমাজে আর মান সম্মান থাকবে না আমাদের। মানুষগুলো কি ভয়ানক বেড়ে উঠেছে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। আমরা ভুত, ভয় দেখানো আমাদের বহু প্রাচীন পেশা। প্রাগৈতিহাসিক যুগেও ভুত ছিল। আজও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। আমাদের সমাজে ভয় দেখানোর ক্ষমতাটা সামাজিক প্রতিষ্ঠা পাওয়ার ছারপত্র। আমাদের বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করতে গেলে আগেই দেখে বাচ্চার বাবা এযাবৎ কয়টা ভুতুড়ে বাড়িতে থেকে কতজন মানুষকে ভয় দেখিয়েছে। কি ভাবছেন? সব হিসেব রাখতে হয় আমাদের। আপনাদের মত আমাদের বায়েও-ডেটা হয় না। ওটা খুব সেকেলে পদ্ধতি। তা ছাড়া কাগজ পত্তরের ব্যবহার আমাদের উঠে গেছে পাঁচ হাজার বছর আগে। আমাদের ভয় দেখানোর হিসেব আপনা-আপনি নিকটবর্তী নীম অথবা শ্যাওড়া গাছের কোটরে জমা পরতে থাকে। নীম, শ্যাওড়ার সঙ্গে আমাদের বহুকাল ধরে লেন দেন হয়ে আসছে কিনা। আমরা ওই গাছ দুটোকে খুব বিশ্বাস করি। এইতো দেখুন, কেলে পেত্নী গত বছর তার ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করতে পারলো না। কারণ এক বাড়িতে গিয়ে ভয় দেখানো তো দূরের কথা, সে ভয় দেখাতে গিয়ে নিজেই অজ্ঞান হয়ে পরেছিল। মানুষগুলো অবিশ্যি বুঝতে পারেনি। তাই রক্ষা। আমরা সঙ্গে যারা ছিলাম, তারা গোবর জলের ছিটে দিয়ে তাঁর জ্ঞান ফেরাই। এখন বছর পাঁচেক সে কোনও ভয় দেখানোর কাজই পাবে না। ছেলেটাও তাঁর মুক্ষু হয়ে থাকবে। তবেই বুঝতে পারছেন কেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটা।

যাই হোক, মানুষের ঔদ্ধত্য বেড়ে ওঠার কথা বলছিলাম। আমার ঠাকুরদা ছিলেন ওই আমাদের প্রাথমিক স্কুলের খুব জাঁদরেল মাস্টারমশাই। তিনি যে সব ভয় দেখানোর পদ্ধতি শেখাতেন, তা কোনোদিন বিফলে যেত না। নিচু ক্লাস থেকেই বাচ্চারা খুব ওস্তাদ হয়ে উঠত। বছর পঞ্চাশেক আগেও আমরা একটু খাট, বিছানা নাড়া দিলে মানুষগুলো ভয়ে কাঁপতো। গুঙিয়ে মরা কান্না জুড়লে তো আর কথাই নেই। প্রায় অক্কা। স্কন্ধকাটা হয়ে মানুষের সামনে চলাফেরা করা আজকাল আর হয় না। ওতে মানুষের অক্কা পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ভুল করবেন না, ভুতেদের মধ্যেও কতগুলি নীতিবোধ আছে। সেই মানুষগুলো আজকাল বলে কিনা ভুত বলে কিছু নেই। মানুষের বাচ্চাগুলো আমাদের দেখে ভেঙচি কাটে। কি লজ্জা, কি লজ্জা।

বলে রাখি, আমার বয়স আড়াইশোর কাছাকাছি। মরেছিলাম বিষ খেয়ে। খুব কড়া বিষ ছিল। অপঘাতে মৃত্যু কিনা, তাই ভুত হয়েছি। মানুষের ভাষায় আমি হলাম মামদো। কি বিচ্ছিরি নাম বলুন তো। আসলে আমাদের কোনও নাম হয়ে না। আমাদের নির্দেশিকা সংখ্যা হয়। আমার সংখ্যা ৩৫০২০০ । প্রথম দুটো নম্বর হোলো আমি এযাবৎ কয়টি বাড়িকে ভুতুড়ে করে রেখেছিলাম। পরের দুটো সংখ্যা হোলো ভয় দেখানোর কাজ শেষ করতে আমার কত মিনিট লাগে। আর শেষ দুটো সংখ্যা হোলো আমি কয়বার বিফল হয়েছি। বুঝতেই পারছেন, একবারও নয়। এখানে আমাকে সবাই ওই নম্বরেই চেনে। আমি কাজ করি মশানতলার ঘাটে। রাত নটা থেকে রাত তিনটে পর্যন্ত থাকতে হয় ওই ঘাটে। এক রাতে বাড়তি দু ঘণ্টা কাজ করলে দু দিন ছুটি পাই। দু বছর বাদে আমি হেড-অফিসে বদলি হয়ে যাবো। জঙ্গলের শেষ প্রান্তে দেখবেন তিনটে নীমগাছ এক জায়গায় আছে। ওটাই আমাদের হেড-অফিস। তখন নীমের ডালে বসে দিব্যি ঠ্যাং নাড়াতে পারবো।

একটা কথা বলে রাখি। এসব কথা খবরের কাগজের লোকেদের দয়া করে জানাবেন না। আমরা প্রচার একদম পছন্দ করি না।

তাই বলছিলাম, মানুষগুলো আমাদের কি বিচ্ছিরি সব নাম দিয়েছে। আমাদের মধ্যে বিধবা মেয়ে-ভুত যারা, তাদের অবশ্য করে মাছ খেতে হয়। এটাই আমাদের নিয়ম। মানুষগুলো তাদের বলে কিনা মেছো-পেত্নী। হতভাগা, মাছ কি তারা সখ করে খায়? নইলে জানবেন আমরা মাছ, মাংস একদমই খাই না। যে সব মেয়েমানুষ বিয়ে হওয়ার আগেই অক্কা পায়, তারা এখানে এসে বিয়ে করতে চায় না। আমরা কোনও জোর জবরদস্তিও করি না। তারা মানানসই মানুষের খোঁজ পেলে তার ঘার মটকে, এখানে এনে, অমাবস্যার রাতে গায়ে গোবরের পর কচু-দেবতার সামনে তার সঙ্গে ঘেঁটুফুলের মালা বদল করে বিয়ে করে। মানুষেরা তাদের নাম দিয়েছে শাঁকচুন্নি। ঘর-গেরস্থালী করা বধূর এমন কুচ্ছিত নাম দেওয়া উচিত? আর ওই আপনারা কি কি যেন বলেন? ঝ্যাঁটায়-চড়া ডাইনী, উল্টো-পা পেত্নী, আরও কত কি। আমাদের রাজ্যে কেউ ঝ্যাঁটায় চড়ে উড়ে বেড়ায় না। ঝ্যাঁটা ব্যবহার হয় একমাত্র বিয়ের সময়। আর পেত্নীদের পা কখনও উল্টো হয় না। পা উল্টো হলে দুই নারকোল গাছের মাথায় দুই পা রেখে দাঁড়াতে অসুবিধা হতো না?

কচু-দেবতার কথা একটু বলে রাখি। বিরক্ত হচ্ছেন না তো? আমরাও পূজা করি। পুরাতন মানকচুর গায়ে চামচিকের রক্ত দিয়ে তিলক কেটে তৈরি হয় আমাদের বিগ্রহ। কচি বিছুটি পাতার মালা পরিয়ে আমরা তাতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করি। আপনাদের তুলসী, আমাদের হোলো বিছুটি। যেদিন গোরস্থানের মাঠে ওই নতুন বিগ্রহ বসানো হয়, সেদিন আমরা সবাই দেহ ধারণ করি। ওই একদিনই আমাদের জামাকাপড় পরতে হয়। একবার একটা মানুষ আমাদের ওই কচু-দেবতার গায়ে পা দিয়েছিল। মরে গেলো পরের দিনই। আত্মহত্যা করলো। আত্মহত্যা করে যারা আমাদের এখানে আসে তাদের কোনও এক কচি মেছো-পেত্নীকে বিবাহ করতে হয়। আমরা অবশ্য আত্মহত্যা করি না। আমাদের হয় আত্ম-জাগরণ। প্রতি পঞ্চাশ বছর পর আমরা কচু-দেবতার সামনে জ্যান্ত চামচিকে বলি দিয়ে আমাদের দীর্ঘ আয়ু কামনা করি।

অমাবস্যার বিভীষিকা আমাদের এই সমাজের সবচেয়ে বিজ্ঞ ও পণ্ডিত ভুত। বয়স দু হাজার পেরিয়ে গেছে। এখন সে অবসরপ্রাপ্ত। সে নাকি একবার নেপোলিয়নের তাবুতে ঢুকে তার লুঙ্গির খুঁট ধরে টেনেছিল। পরদিন নেপোলিয়ন ভয়ে যুদ্ধে যান নি। হাঁ, ভয় দেখাতেও সাহস লাগে। নেপোলিয়নের তাবুতে ঢোকা কি যে সে কথা? সে বলছে ভুতেদের খুব দুর্দিন আসছে। কারণ মানুষেরা নাকি অন্য গ্রহে বসবাসের ব্যবস্থা প্রায় পাকা করতে চলেছে। মানুষ না থাকলে কি আর ভুতেদের দিন চলবে?
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...